‘নিছক অধ্যয়নের জন্যই অধ্যয়ন করা আমার পক্ষে খুব শক্ত কাজ। ...স্বাভাবিক অবস্থায় আমাকে দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকেই চলতে হয়, তা না হলে আমি কোনো বুদ্ধিগত উত্তেজনা পাই না।’ দ্বান্দ্বিক চিন্তার বুদ্ধিগত উত্তেজনাপ্রাপ্ত গ্রামসিকে আমরা চিনি গত শতকের সাতের দশকে রণেশ দাশগুপ্তের লেখার মাধ্যমে। গ্রামসির মৃত্যুর প্রায় ৩৫ বছর পর আমরা জানতে পারি ইতালিতে শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক মার্কসবাদী চিন্তক, তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যাঁকে ফ্যাসিস্ট মুসলিনি যমের মতো ভয় পেত। গ্রামসির ভয়ে তাড়িত মুসলিনি তাঁকে কারাগারে বন্দি করেছিল।
মুসলিনির বন্দিত্বে গ্রামসি যেন আরো শাণিত হলেন। তিনি লিখতে শুরু করেন। তাঁর সেই লেখনিই ‘প্রিজন নোটবুক’ আকারে পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়। প্রিজন নোটবুক থেকে শুরু করে গ্রামসির যাবতীয় লেখনিই গোটা বিশ্বের মার্কসবাদী থেকে শুরু করে সাধারণ পাঠকের মনেও প্রথাগত মার্কসীয় চিন্তা ও কর্মপদ্ধতিতে নাড়া দিল। খোদ লেনিনও সেই স্পন্দন অনুভব করেছিলেন।
ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে গ্রামসি দেখিয়ে দিলেন খাঁটি বুদ্ধিজীবী কে। এই কুঁজো মানুষটির সারা জীবনের সংগ্রাম, তাঁর চিন্তা-তত্ত্ব ও সেই চিন্তা-তত্ত্বের বৈশ্বিক-স্থানিক-কালীক প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেই বইটির লেখক আমাদের সামনে গ্রামসির জীবন, চিন্তা ও সমকালে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা স্পষ্ট করেছেন। কারণ বাংলা ভাষায় তথাকথিত উত্তরাধুনিকতাবাদী চিন্তা থেকে গ্রামসি ব্যাখ্যায় মার্কসীয় চিন্তক-তাত্ত্বিক গ্রামসি অনেকটাই অপব্যাখ্যার শিকার। লেখক সেখানে থেকে গ্রামসিকে টেনে বার করতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি।