প্রয়াত এপিজে আবদুল কালাম, যিনি একজন পদার্থ ও মহাকাশ বিজ্ঞানী, এবং সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণে অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর ১০০টি উক্তি ও লেখকের ১০০টি অনবদ্য প্রবন্ধ ওঠে এসেছে বইটিতে।
“কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় হল সুন্দর স্বর্গদূত, যাঁরা তোমার কাঁধে অবস্থান করবে।”
কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় থাকলে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা থেকে বিরত থাকতে হয় না। সফলতা অর্জনের দু’টি মূল পূর্বশর্ত হল, কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে এবং সেই সাথে অধ্যবসায়ীও হতে হবে। যার মাঝে অধ্যবসায় বা ধৈর্য্য নেই সে সবসময় হতাশায় ভোগে। আর, হতাশাগ্রস্ত মানুষ সফলতা পায় না।
আমরা সবাই সফল হতে চাই। পরিশ্রম করা ব্যতীত কেউ কোনোদিন স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে প্রাংশু সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। পরিশ্রম বিহীন যে সফলতা তার ব্যাপ্তিকাল লেশমাত্র। প্রাংশু সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে স্বপ্নের সিঁড়িটা কঠোর পরিশ্রম করেই বানাতে হয়। আর, এই সিঁড়ি বেয়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যকে স্পর্শ করা যায়।
কঠোর পরিশ্রম করেও আপনি সফলতার নাগাল নাও পেতে পারেন। এর মানে এই নয় যে, আপনার সফল হওয়ার যোগ্যতা নেই। একবারের চেষ্ঠায় না হলে প্রচেষ্ঠা অব্যহত রাখতে হবে। হার মেনে নিলেন, তো হেরেই গেলেন। অধ্যবসায়ী হয়ে বা ধৈর্য ধারণ করে সফল হওয়ার জন্য বারবার কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে। এবং, সেটা ততক্ষণ পর্যন্ত জারি থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সফলতা হাতের নাগালের মধ্যে আসবে।
সুতরাং, পরিশ্রম ও অধ্যবসায় স্বর্গদূতের মত, যাঁরা সফল ব্যক্তিদের কাঁধে সবসময় বিরাজমান থাকে।
“পরিবর্তন হল একটি দূরদর্শী দর্শন, উদ্ভাবনী মন ও পথনির্দেশক কর্মশক্তির পরিণাম।”
একটি নির্দিষ্ট পর্যায় থেকে আরেকটি পর্যায়ে উন্নীত হওয়াকে পরিবর্তন বলে মনে করা হয়। কোনো ব্যক্তি বা সমষ্টি যদি তার বা তাদের মাঝে পরিবর্তন ঘটাতে চায় তাহলে যে মুখ্য উপাদানগুলো অধিকারে থাকা প্রয়োজন তা হলো দূরদর্শী দর্শন, উদ্ভাবনী মন ও পথনির্দেশক কর্মশক্তি।
দূরদর্শী দর্শন ক্ষমতা হলো এমন এক শক্তি যা প্রয়োগের ফলে অদূর ও সুদূর ভবিষ্যতের পরিবর্তিত আকার বা পরিস্থিতিকে অনুমান করা যায়। উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে যারা নিজেদের মাঝে পরিবর্তন আনতে ইচ্ছুক তারা যে পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে এই পরিবর্তন ঘটাবে তার ফলাফল পূর্ব থেকে যথাযথভাবে অনুমান করতে পারলে তা হবে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। তাই, ব্যক্তি জীবনে বা জাতীয়ভাবে পরিবর্তন ঘটানোর জন্য দর্শন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
পরিস্থিতিকে উন্নত করার জন্য বা পরিবর্তন ঘটানোর জন্য উদ্ভাবনী মন হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উদ্ভাবনী মন ব্যতীত বর্তমান পরিস্থিতি থেকে অন্য আরেকটি উন্নত পরিস্থিতিতে নিজেকে স্থাপন করার কথা কেউ ভাবতে পারবে না। যে মন উদ্ভাবনীশক্তি শূণ্য সেই মন পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করতে সক্ষম হবে না। ফলে কেমন পরিবর্তনটা কাঙ্ক্ষিত হওয়া উচিৎ তা নির্ধারণ করতে সে ব্যর্থ হবে।
অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে কর্মশক্তি প্রযোগ করা প্রয়োজন, অর্থাৎ কঠোর পরিশ্রম করার প্রয়োজন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিশ্রম ব্যতীত বর্তমান অবস্থাতেই টিকে থাকা অসম্ভব; আর অবস্থার উন্নতি করতে চাইলে তো কঠোর পরিশ্রম পরম গুরুত্বপূর্ণ, যা কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করে।